Sunday, September 22, 2019

কাশফুল

এলো শরৎ চল ছুটে চল
মন হয়েছে আকুল,
চোখ মেলে দেখ
ফুটেছে কাশফুল
ছাপিয়ে ব্রহ্মপুত্রের দু'কূল।
গ্রামে কতো মজা,ধুলিমাখা সুখ
যান্ত্রিক শহরে আজ
প্রাণ করে ধুকপুক।
মাঠ জুরে সব তরুণ কিশোর
আজ গেলা সব কই,
রাজমহলের প্রাসাদ দোরে শূন্য বসে রই।
হারিয়ে কোথায় গেলি রে সব
আয়রে ফিরে আয়,
কাশফুলের শুভ্র দেশে
সবাই মিশে যাই।
দুরন্ত ঘোড়া যেমন টগবগিয়ে চলে
সবাই মিলে ছুটবো মোরা
শুভ্র দেশে,
তারই তালে তালে।
-মায়া রাজবংশী
ছবি: সংগ্রহ 

Wednesday, August 21, 2019

আমাদের আশীর্বাদ করবেন

অনুগল্প

সকাল বেলা ঘুম চোখে কল রিসিভ করতেই তার প্রশ্ন, পিতু ভাই কেমন আছেন? তার নাম ছিল শিলা। শান্তনা তাহমিন শিলা। মেতঠো পথের ধারে যে জিবনান্দের ভিটা দেখা যায় সেখানেই তার বাসা।শিলা আমার মামাতো বোন।তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। এ মাসের প্রথম সপ্তাহের মঙ্গলবার তার বিয়ে।ছেলে বড় ব্যবসায়ী। নাগেশ্বরীতে তার বাবাকে সবাই এক নামে চেনে।নাম আজিজ মোল্লা।শুনেছি মোল্লা গ্রুপের মালিক না কি তার দূর সম্পর্কের খালাতো ভাই হন।
-ভাল আছি, তুমি কেমন আছ?
-আমি ভাল নাই। পিতু ভাই আপনি কি আজ আমাদের বাসায় একটু আসতে পারবেন? খুব দরকার।
-আচ্ছা, আমি আসবো।
- আসবো না, এখনে আসেন। শোনেন ভাল জামা কাপড় পরে আসবেন।আর হ্যাঁ সাথে কিছু টাকা পয়সা নিয়ে আসিয়েন।
-আচ্ছা আসতেছি কিন্তু ব্যাপার কি?
-পিতু ভাই, আমাকে নিয়ে পালাতে পারবেন?
-তোমাকে নিয়ে পালাবো মানে?
-পালাবেন মানে আমি এ বিয়েতে রাজি নই,আমাকে বাসা থেকে নিয়ে ভাগবেন। প্লিজ আপনি আমায় বাসা থেকে পালিয়ে নিয়ে যান প্লিজ।আসার সময় ব্যাপারীহাট থেকে দুইটা ঢাকার টিকিট কেটে আসবেন।
আমি বোকার মতো হ্যাঁ বলি।শিলাও ফোনটা কেটে দেয়।
আমি ভাবতে থাকি যে শিলাকে পাঁচ বছর ধরে ভালবেসে আসছি,বেকার বলে আমার ভালবাসায় সে কোন পাত্তা দেয় নি আজ সে শিলার এমন কি হলো যে আমার সাথে পালাতে চায়?এমন সময় শিলা আবার কল দেয় পিতু ভাই আপনার আসার দরকার নাই আমি একাই ব্যাপারীরহাট যেতে পারবো, আপনি আসলে আবার আপনাকে সন্দেহ করবে। আপনি বরং কাউন্টারে টিকিট কেটে বসে থাকেন।
-হ্যাঁ সেটাই ভাল হয়।
আপনি কিন্তু তাড়াতাড়ি আসবেন, আমার একা থাকতে ভাল লাগবে না বলে শিলা ফোনটা রেখে দেয়।আমি আর বেশি কিছু না ভেবে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বিছানা ছেড়ে উঠি।নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করি এতো ভাবার কি আছে শিলা আমাকে ভালবাসে আমিও শিলাকে সে আমার সাথে পালাতে চায় আমি তাঁকে নিয়ে পালাবো এটাই তো সিনামায় ঘটে।সুযোগ বারবার আসে না সুযোগ যখন এসেছে তাঁকে হারাতে চাই না।বাক্স বন্ধি লন্ড্রি করা জামাটা গায়ে দিয়ে বন্ধু আজমের কাছে দুই হাজার টাকা ধার নিয়ে রওনা দেই।
ব্যাপারীর হাটে গিয়ে পিংকি গাড়ির দুইটা টিকিট কেটে অপেক্ষা করতে থাকি। সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটে শিলা এসে হাজির হয়, পিতু ভাই আপনি এসেছেন খুব ভাল কাজ করেছেন।তারপর শিলা আমার আমার পাশে এসে বসে বার বার এদিক সেদিন কি যেন খুঁজছিল আর ঘামছিল।ভাবলাম বাসা থেকে পালিয়ে এসেছে তাইতো কেউ দেখে কিনা এটাই লক্ষ্য করতেছে। এমন সময় শিলার বয়সী একটি ছেলে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে কাউন্টারে প্রবেশ করলো। শিলা তাঁকে দেখে ছুটে গেল তার কাছে-জয় তোমার আসতে এতো সময় লাগলো। আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে গাড়ি ছাড়ার আমি তো টেনশনে পরে গেছিলাম তুমি আসবে কি না। আর জয় উনি হলেন আমার ফুফাতো ভাই পিতু ভাই।উনি আমাদের গাড়ির টিকিট করেছেন।
জয় নামক ছেলেটি আমাকে সালাম দিয়ে হাত বাড়িয়ে দিল। আমি তার হাত ধরলাম,শিলা কথা বলেই যাচ্ছে। পিতু ভাই এ হলো জয়, আমার বন্ধু।পিতুভাই জয় খুব ভাল ছেলে, আমরা দুজনে দুজনকে ২ বছর ধরে জানি। ও ঢাকায় বিমান বাহিনীতে চাকুরি করে।
এমন সময় বাসের হেলপার এসে জানালো বাস ছেড়ে দিবে আসেন। আমরা বাসে বাসের কাছে গেলাম। শিলা জয়ের হাত ধরে গাড়িতে উঠার আগে আমার  কাছে আসলো,পিতু ভাই টাকা এনেছেন?ওর না বেতন হতে আরো কয়েকদিন দেরি হবে, আমার পীড়াপীড়িতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি মানিব্যাগ বের করলাম ব্যাগে হাত দিয়ে যা পেলাম শিলার হাতে ধরিয়ে দিলাম।শিলা ও জয় গাড়িতে উঠে গেল, যাওয়ার সময় শিলা আমার হাত জরিয়ে ধরে বললেন পিতু ভাই আমাদের আশীর্বাদ করবেন।

গল্পকার-জাহানুর রহমান খোকন

Wednesday, August 14, 2019

একুশ আমার

পীচ ঢালা রাস্তায় রক্তের দাগ শুকায়নি
রাতের পর রাত দিনের পর দিন
অপেক্ষা একটি দিনের
অতঃপর একুশ আসে
একুশ আমার।

ডাহুক ডাকা রাত ভোর হয়
ডাক আসে প্রভাতফেরির,
হাতে এক তোরা গাধাফুল
নগ্ন পা
মুখে আমার ভাই তোমার ভাই রফিক জব্বার বরকত স্মরণ
অন্তরে কয়েকটি বর্ণ
আমি  বাঙলায় কথা বলি
একুশ আমার।

স্বর্গ থেকে মিছিলে এসে সুর মিলায় রফিক ভাই
শফিক ভাই,
সক্রোধে চিৎকার করে বলে
নাড়ী ছেড়া ফুল নিয়ে এতো কাড়াকাড়ি কেন?

কেউ শুনে না,কেউ জবাব দেয় না
সূর্যদেব রক্তিম হওয়ার আগেই সূতা ছিঁড়ে যায়
ফুলগুলো লাওয়ারিশ পরে রয়,
কেউ খবর রাখে না
একুশ আমার।

-জাহানুর রহমান খোকন

নেতা

ভোট আসছে নেতা চাপছে
জনগণের কাছে,
মাথা ঠুকায় দেখা হলে
মুচকি মুচকি হাসে।

ভোটের আগে নেতা আমার
ধোয়া তুলসীপাতা,
বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলেন
মধুর মধুর কথা।

মহামূল্যবান ভোটটি আপনারা
দয়া করে দিবেন,
আমি নেতা হলে আপনি
সব সুবিধা পাবেন।

ভোটের আগে নেতা আমার
বুকে মিলায় বুক
নেতার অসহায়ত্ব দেখে
মনে লাগে দুঃখ।

ভাবখানা তার এমন থাকে
যেন অসহায়,
কাংগালী ভোগ দিলেও নেতা
সবার সাথেই খায়।

ভোটের পরে নেতা আমার
হয়ে যায় অচীন
ভাবটা এমন মানুষ দেখলে
করে গা ঘিণঘিণ।

-জাহানুর রহমান খোকন

বসন্ত বিলাপ

ফাগুণ এলেই আগুন জ্বলে
গাছের শাঁখে শাঁখে ফোটে রক্তকবরি,
মস্তিষ্কে নয়,রক্তক্ষরণ ঘটায়  হৃদয়ে।
কত কষ্ট, না বলা শত ব্যথা
কানে কানে বলে যাওয়া কথা
তোমায় ভালবাসি।

প্রেমারতির গন্ধহীন বসন্ত বিলাস
তোমাকে ছাড়া  প্রথম নয়,
জীবনের এই আবর্তমান কালের।
একটি গোলাপের আত্মহুতি,
কুমারির কোলজুড়ে নেমে আসা চাঁদ
ভালবাসা শব্দটি বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়।

হাতে হাত রাখো
কাধে রাখো মাথা
ভেবে দেখো,
কতো ফাগুনের আগুন জ্বলে বুকে।
একবার এসো আমাদের গ্রামে
শিমুল ফুলে কিভাবে সাঁজে ফাগুণ
যেখানে কবিদের ভাবনার পরবাস,
কাকদের সেখানে মেলা বসে।
তোমার খোঁপায় থাকবে গোলাপ ফুল
আমি তোমায় ব্যাঙ্গমার গল্প শুনাবো
একবার এসো তব,
আমি তোমায় শিমুল বনে
কাকদের মেলা দেখাবো।।

-জাহানুর রহমান খোকন

এসো হে বৈশাখ


বৈশাখী রোদে আবার বেজেছে
রঙিন কাচের চূড়ি,
মাঠ-ঘাট চৌচির
ক্ষেত পুড়ে খাক
পানি বিনা কৃষক আহামরি।

দুঃখ সুখ আশা ও নৈরাশা তোমার ফুৎকারে বালুসম,
উড়-ক গগনে
ভরে উঠুক ভস্মসার পৃথিবী মম।

ঈশান কোণে শুনি
তোমার  অকুন্ঠিত প্রলয়ের ডাক,
সকল দীনতা ক্লেশ লুপ্ত কর
জড়তা রুক্ষতা ধুয়ে মুছে যাক।
তুমি এসো কৃষাণীর ডালি-কুলায়
গরম ভাতের ওম উঠুক
অনাহারির চুলায়।
সকল দুঃখ ক্লান্তি ধুয়েমুছে যাক
এসো হে বৈশাখ।
লেখক-জাহানুর রহমান খোকন

নারী

নারী নদীর মতো
নাকি
নদী নারীর মতো,
নাকি নারী ও নদী একশিল্প।?।
প্যাঁচ খেয়ে যাই।
তোমাকে পেয়েছি ঘুমন্ত স্বপ্নে
আলো আঁধারের মাঝে
চাঁদহীন পূর্ণিমার রাতে
শিল্পরুপে।
দূরুত্ব বজায় রেখে
দৃষ্টিতে সন্ন্যাসী হয়ে
আলগোছে খুলেছিনু
শাড়ির আঁচল।
হাতের আংগুলগুলো প্রবাহমান নদী হয়ে
দৃষ্টিকে প্রসারিত করে
উরুর ভাজ,ক্ষীণ চাঁদ স্তন
পেটের মসৃণ ত্বক।
লক্ষীর ছাপের মতো
নীরবে আংগুল চলে যায় নাভীমূলে
জেগে উঠে দ্বিতীয় শরীরের অস্তিত্ব।
অতঃপর আলোরা নিভে যায়
জেগে উঠে শিল্পীমন
দু'হাতে চলে শিল্প ভাঙার লড়াই,
নিতম্ব কুঞ্জে মুখ গুজে সম্প্রচারিত হয়
সেই সংবাদ।

নদী বাঁচাও

বন্ধ করে ফসলি জমি
নষ্ট করে কড়ি,
আষাঢ় মাসের বর্ষা কালে
নেই ক্যানেলে পানি.

আমাদের ছোট নদী
জল থই থই করে,
কোটি টাকার ক্যানেল গুলো
হা-হতাশায় মরে।

মুজিব মানেই বাংলাদেশ

আগস্ট মাসে এই স্বদেশে
আকাশ মেঘে ঢাকা,
বৃষ্টি পরে অবিরত
তোমায় ভুলে যায় না থাকা।
তোমার অপেক্ষায় তরুণ সমাজ
তোমার যোগ্য উত্তরসূরি,
আগস্টের সেই দিনের কথা
কেমন করে সইতে পারি?
মুজিব মানে বঙ্গবন্ধু
মোদের গর্ব,মোদের দেশ,
সেই চেতনায় তরুণ সমাজ
মুজিব মানেই বাংলাদেশ।
লেখক-জাহানুর রহমান খোকন